প্রেমিকাকে পেতে ৩ বছর ধরে ক্যাডার হওয়ার নাটক সাজিয়েছিলেন বিপ্লব

বেকার জীবনবেকার জীবন
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  02:52 PM, 29 April 2022

বর্তমান সময়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে স্নাতক সম্পন্নকারী অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর লক্ষ্য বিসিএস। বিসিএসের প্রতি তরুণ তরুণীদের এই আগ্রহ নিয়ে প্রায়শই বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা দেখা যায়। তবে বিসিএসের প্রতি এই আগ্রহ যে কখনও কখনও প্রতারণার জন্মও দিতে পারে সম্প্রতি তারই উদাহরণ তৈরি করেছেন বিপ্লব নামের এক শিক্ষার্থী।

বিপ্লব কুমার সাহা নামের ওই শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সরকারি চাকরির৷ কিন্তু একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দিলেও উত্তীর্ণ হচ্ছিলেন না তিনি। ফলাফল স্বরূপ আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিকট ক্রমাগত ছোট হচ্ছিলেন তিনি, এমনকি শঙ্কা তৈরি হয়েছিলো পছন্দের মানুষটিকেও পাবেন না তিনি। আর এই সবকিছু থেকে বাচঁতে প্রতারণার আশ্রয় নেন বিপ্লব।

একদিন কিংবা দুইদিন নয় প্রায় তিন বছর সময় নিয়ে এই প্রতারণার নাটক মঞ্চস্থ করেন বিপ্লব। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারির পর থেকেই তার ফেসবুক আইডিতে বিসিএসের বিভিন্ন ধাপে সফলতার আপডেট দিতে থাকেন। ২০১৯ এর ২৫ ডিসেম্বরে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘সামনে আমার প্রথম ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা রয়েছে। সবাই আশীর্বাদ করবেন।’ ২৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখের এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কথা জানান। পোস্টটিতে তিনি তার বেশ কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তিকে ধন্যবাদও জানান তাকে সহযোগিতা করার জন্য। ২৬শে মার্চ ২০২১ তারিখে বিপ্লব কুমার আবার ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘আমার ৪০তম বিসিএস ভাইভা সম্পন্ন হয়েছে, খুব কাছ থেকে কিছু প্রিয় স্যারদের কাছে ভাইভা দিয়ে আসলাম।’ এরপর সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জানান, ‘৪০ তম বিসিএসের মাধ্যমে বিসিএস (পুলিশ) বা সহকারী পুলিশ সুপার বা সহকারী পুলিশ কমিশনার সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ ও দোয়া করবেন।’

এখানেই শেষ নয়, বিপ্লব নিজেই তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফোন দিয়ে জানান সাফল্যের সংবাদ। বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপগুলোতেও শিক্ষার্থীরা বিপ্লবকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিতে শুরু করেন। তবে কিছুদিন পরই সত্যিটা সকলের সামনে আসে। চঞ্চল দাস নামে লোকপ্রশাসন বিভাগেরই এক শিক্ষার্থী দাবি করেন বিপ্লব প্রায় নিয়মিতই বিভিন্ন সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মিথ্যা দাবি করেন, তবে কখনোই এসকল চাকরিতে যোগদানের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি তার কাছে কেউ এডমিট কার্ড দেখতে চাইলে তিনি মানহানির মামলা করার হুমকি দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণই হননি বিপ্লব। তিনি তার রোল নম্বর ১৪০১১০৭৩ দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে এই রোল নম্বরটি তার নয়। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তথ্যানুযায়ী, এই রোল নম্বরে পরীক্ষা দিয়েছেন মারজিয়া রহমান নামে এক শিক্ষার্থী।

মারজিয়া রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ৩৬তম হয়েছেন তিনি। পরিবারসহ খুলনা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। অপরদিকে ভুয়া পরিচয় দেওয়া বিপ্লব কুমার দাসের বাড়িও খুলনার পাইকগাছায়।

প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর বিপ্লব কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। বাবা অনেক কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছেন। এতদিন সরকারি চাকরির চেষ্টা করেও চাকরি পাননি। বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনদের কাছে মুখ দেখাতে পারছিলেন না। এমনকি পছন্দের মানুষটিকেও হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আর এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই বিসিএস উত্তীর্ণের ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।’

আপনার মতামত লিখুন :