লিখিত পরীক্ষার গণিতে ভালো করা মানে প্রত্যাশিত ক্যাডার পাওয়া

বেকার জীবনবেকার জীবন
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  03:51 AM, 14 August 2019

গণিত হলো বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ট্রাম্প কার্ড। এ বিষয়ে আপনি অন্য পরীক্ষার্থী থেকে যতটা এগিয়ে থাকতে পারবেন, অন্য বিষয় দিয়ে সেটা প্রায় অসম্ভব। গণিতে ভালো করা মানে প্রত্যাশিত ক্যাডার পাওয়ার দৌড়ে অনেক এগিয়ে থাকা। একটুখানি সচেতন হলেই গণিতে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। গণিত অনুশীলনের বিষয়। যিনি যত অনুশীলন করবেন, তিনি পরীক্ষায় তত ভালো করবেন। ট্রাম্প করুন (গণিতে ভালো করুন), অন্যদের চেয়ে বেশি নম্বর পান এবং ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকুন। সহজ হিসাব। ► নম্বর বণ্টন : সাধারণ ও টেকনিক্যাল— উভয় ক্যাডারে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতায় মোট বরাদ্দ ১০০ নম্বর। ৫০ নম্বরের গাণিতিক যুক্তি ও ৫০ নম্বরের মানসিক দক্ষতা। গাণিতিক যুক্তি অংশে ৫ নম্বরের ১২টি প্রশ্ন থাকে, যেকোনো ১০টির উত্তর করতে হয়। মানসিক দক্ষতা অংশে ৫০টি এমসিকিউ থাকে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো প্রতিটির জন্য ১ নম্বর বরাদ্দ, ভুল হলে কাটা যাবে ০.৫ নম্বর। ► ক্যালকুলেটর : গাণিতিক যুক্তি অংশে সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। তবে সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। মানসিক দক্ষতা অংশে ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

► দুই অংশ মিলিয়ে যোগফল ৩০ : অনেক প্রার্থীর মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতায় আলাদাভাবে ৩০ পেলে তা মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে। এর কম পেলে যোগ হবে না। এটা ভুল ধারণা। দুই অংশের যোগফল ৩০ হলেই তা মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে। গাণিতিক যুক্তি গাণিতিক যুক্তির মোট ১২টি টপিক রয়েছে। সাধারণত প্রতিটি টপিক থেকেই প্রশ্ন করা হয়। সরলীকরণ, পাটিগণিত (ঐকিক নিয়ম, গড়, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফা, লসাগু, গসাগু, অনুপাত, সমানুপাত, লাভক্ষতি), বীজগাণিতিক সূত্র, বহুপদীর উৎপাদক, একঘাত ও দ্বিঘাত সমীকরণ ও অসমতা, দুই বা তিন চলকবিশিষ্ট রৈখিক সমীকরণ পদ্ধতি, সূচক ও লগারিদম, সমান্তর ও গুণোত্তর ধারা ও অনুক্রম, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্ত, পিথাগোরাস, ক্ষেত্রফলসংক্রান্ত উপপাদ্য ও অনুসিদ্ধান্ত, পরিমিতি, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, সরলরেখার সমীকরণ, ত্রিকোণোমিতির দূরত্ব ও উচ্চতা, সেট ও ভেনচিত্র, বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা ইত্যাদি টপিকের ওপর প্রশ্ন করা হয়।

► প্রস্তুতি ও লেখার কৌশল ► প্রথমে বিগত বিসিএস লিখিত পরীক্ষার গাণিতিক যুক্তির প্রশ্নগুলো দেখে নেবেন। বিশেষ করে ৩৪তম বিসিএসপরবর্তী লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন। এতে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা হবে। লিখিত পরীক্ষার গাণিতিক যুক্তি অংশের বেশির ভাগ টপিক মাধ্যমিক গণিত ও উচ্চতর গণিত অংশের সঙ্গে মিলে যায়। এ ছাড়া কিছু বিষয় উচ্চ মাধ্যমিক বীজগণিত বই থেকে করতে হয়। মাধ্যমিক গণিত বইয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম, দশম, ১১শ, ১২শ, ১৩শ, ১৪শ, ১৫শ, ১৬শ অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। মাধ্যমিক উচ্চতর গণিত বইয়ের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, ১১শ, ১৩শ, ১৪শ অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ মাধ্যমিক বীজগণিত ও ত্রিকোণোমিতি বই থেকে বিন্যাস সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, সেট, ভেনচিত্র ও ত্রিকোণোমিতি বিষয়গুলো করতে পারেন। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক জ্যামিতি ও ক্যালকুলাস বই থেকে স্থানাঙ্ক জ্যামিতি ও সরলরেখার সমীকরণ অধ্যায় করতে পারেন। ► যে অধ্যায়ের গণিত অনুশীলন করবেন, তার প্রয়োজনীয় সূত্রগুলো প্রথমেই একটি খাতায় লিখে রাখুন। এভাবে প্রতিটি অধ্যায়ের সূত্রগুলো লিখে ফেলুন। পরীক্ষার আগে রিভাইস করতে সুবিধা হবে।

► গণিত অনুশীলন দুভাবে করা যায়। চোখ দিয়ে দেখে এবং হাতে-কলমে অনুশীলন করে। পরীক্ষায় যেহেতু আপনাকে হাতে-কলমে গণিত করতে হবে, তাই হাতে-কলমে গণিত অনুশীলন করার অভ্যাস করুন। চোখ দিয়ে দেখে অনুশীলন করলে পরীক্ষায় গণিত করতে গিয়ে মাঝপথে আটকে যাবেন। ► বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী সাধারণত জ্যামিতি উত্তর করবে না—এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জ্যামিতি অংশ বাদ দিয়ে প্রস্তুতি নেয়। এই অংশ বাদ দেবেন না। প্রশ্নকর্তা সাধারণত দুই থেকে তিনটি প্রশ্ন এমনভাবে করেন, যা পরীক্ষার হলে উত্তর করে আসা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই মুহূর্তে জ্যামিতি বিপদের বন্ধুরূপে পাশে থাকে। বিগত লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো অনুশীলন করলে জ্যামিতি কমন আসতে পারে। ► প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো শর্টকাটে অঙ্ক করবেন না। লিখিত পরীক্ষায় সব অংশ ভেঙে করুন। প্রয়োজনীয় সাইড নোট দিন। এতে যিনি খাতা দেখবেন, তিনি নম্বর কাটার সুযোগ পাবেন না। গণিত করা শেষ হলে উত্তর লিখবেন। উত্তর না লিখলে নম্বর কাটা যাবে।

► পরীক্ষায় কোনো অঙ্ক করতে গিয়ে আটকে গেলে বা না পারলে অযথা সময় নষ্ট না করে পরবর্তী প্রশ্নে চলে যান। গণিত পরীক্ষায় মাথা ঠাণ্ডা রাখা খুব জরুরি। মানসিক দক্ষতা মোট ছয়টি টপিকের ওপর প্রশ্ন করা হয়। টপিকগুলো হচ্ছে—ভাষাগত যৌক্তিক বিচার (Verbal Reasoning), সমস্যার সমাধান (Abstract Reasoning), স্থানাঙ্ক সম্পর্ক (Space Relations), সংখ্যাগত ক্ষমতা (Numerical Ability), বানান ও ভাষা (Spelling and Language) ও যান্ত্রিক দক্ষতা (Mechanical Reasoning)। মোট ৫০টি প্রশ্ন, নম্বরও ৫০। ► প্রস্তুতি ও কৌশল ► প্রস্তুতি নেওয়ার আগে বিগত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতে হবে। বিশেষ করে ২৭তম লিখিত থেকে ৩৭তম লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন। এর সঙ্গে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নগুলোও দেখে নেবেন। কিছু প্রশ্ন আছে, সংখ্যা পরিবর্তন করে রিপিট হয়। ► ভালো করার জন্য প্রতিদিন অনুশীলন করুন। যেকোনো ভালো মানের সহায়ক বই থেকে অনুশীলন করতে পারেন। অনলাইনেও অনুশীলন করতে পারেন।

► ভাষাগত যৌক্তিক বিচার অংশে সাধারণত অর্থ অনুধাবন ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা, সাদৃশ্য, ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা, রক্তের সম্পর্ক বা সম্পর্ক মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন থাকে। অনুশীলন করলে আয়ত্তে আসবে। ► বিমূর্ত যুক্তি বা সমস্যা সমাধান অংশে সাধারণত চিত্র দেখে উত্তর করা বা চিত্র যুক্ত অভীক্ষা থাকে। এক্ষেত্রে চিত্রের মধ্যে মিল খুঁজে বের করতে হয়। এ ছাড়া একটি চিত্রের ভেতর অনেক ছোট চিত্র থাকে, যা খুঁজে বের করতে হয়। ► স্থানাঙ্ক সম্পর্কে দূরত্ব ও স্থান নির্ণয় করতে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দিক সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি। ► সংখ্যাগত ক্ষমতায় বিভিন্ন ধারা, বীজগণিত, পাটিগণিত, ঘড়ি ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন হয়। ঘড়িসংক্রান্ত প্রশ্নে ঘণ্টা ও মিনিটের কাটার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করতে বলা হতে পারে। ► বানান ও ভাষা অংশে বাংলা ও ইংরেজি শব্দের সঠিক বানান, অর্থ, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন হয়। বানান সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে এতে ভালো করা সম্ভব। ► যান্ত্রিক দক্ষতা অংশে আয়না ও পানিতে প্রতিচ্ছবি, বিভিন্ন যন্ত্রের মূলনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন হয়। Miror and Water Image সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি।

আপনার মতামত লিখুন :